logo

প্রতিবন্ধিত্ব জয় করে সফল উদ্যোক্তা

প্রকাশ: ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ এ ১২:২১ PM

প্রতিবন্ধিত্ব জয় করে সফল উদ্যোক্তা

তিন বছর বয়সে পোলিও রোগে আক্রান্ত হয়ে হাঁটাচলার ক্ষমতা হারান জিতু। বাবার কোলে-পিঠে চড়ে বিদ্যালয়ে গমন। কিন্তু মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোতে পারেননি। শারীরিক প্রতিবন্ধিতা সত্ত্বেও পরিবারের বোঝা হতে চাননি তিনি। নিজেকে স্বাবলম্বী করতে নানা কাঠখড় পুড়িয়েছেন। কখনো বাবার ভাঙারির দোকান, আবার কখনো মুঠোফোন সার্ভিসিংয়ের কাজ করেছেন। বন্ধুর কম্পিউটার নিয়ে ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ শেখেন। এরপর আর পেছনে ফিরতে হয়নি জিতুর। বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিংয়ের পাশাপাশি উদ্যোক্তা হয়ে শিশুদের কাপড় তৈরি করে অনলাইনে বিক্রি করছেন জিতু। তাঁর কারখানায় বর্তমানে ৭০ জন মানুষ কাজ করেন। একসময় অন্যের সাহায্য ছাড়া চলাচল করতে পারতেন না। আর এখন চড়েন ব্যক্তিগত গাড়িতে। অদম্য ইচ্ছাশক্তিতে প্রতিবন্ধিতা জয় করে জিতু হয়ে উঠেছেন একজন সফল উদ্যোক্তা।

জিতু রায়ের জন্ম রংপুর নগরের তাজহাট মোল্লাপাড়ায় ১৯৮৮ সালে। বাবা মহেন্দ্র মহত ও মা মঞ্জু মহতের তিন সন্তানের মধ্যে সবার বড় তিনি। জন্মের তিন বছরের মধ্যে পোলিও রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি প্রতিবন্ধী হয়ে পড়েন। নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করলেও অভাব-অনটন আর শারীরিক অক্ষমতায় পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। জিতু প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার অনিশ্চিত জীবন নিয়ে চিন্তায় পড়ে পরিবার। বিষয়টি বুঝতে পেরে বাবার পিঠে চড়ে লোহালক্কড়ের (ভাঙারি) ব্যবসা শুরু করি। সেখানে কষ্ট হওয়ায় পরে মোবাইল সার্ভিসিংয়ের সঙ্গে যুক্ত হই। কিন্তু সে জন্য একটি ভবনের তিনতলায় উঠতে হতো। পরে সেই কাজও ছেড়ে দিই। এরপর ফ্রিল্যান্সার হওয়ার স্বপ্ন দেখি। এ জন্য কম্পিউটার প্রয়োজন। কিন্তু অনেক জায়গায় কম্পিউটার শেখার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হই।’
জিতু রায় বলেন, সেই সময়ে বাল্যবন্ধু তৌফিকুল নিজের কম্পিউটার দিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়ান। এরপর তিন মাস গুগল ও ইউটিউব দেখে ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ শেখেন। সময়টা ২০১১ সালের শেষ দিকে। পরে মায়ের জমানো টাকা এবং ধার করে একটি কম্পিউটার কেনেন। এ কাজে সফলতা আসে। ২০১৩ সালে ফ্রিল্যান্সিং থেকে প্রথম ৩০০ ডলার আয় হয়। এরপর নতুন উদ্যমে এগিয়ে যান। ফ্রিল্যান্সিং দিয়ে শুরু করলেও ২০২১ সাল থেকে তিনি উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ শুরু করেন। জিতু রায় বলেন, ‘রকমারি শিশু ঘর ডটকম’ নামে ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজ খুলে শিশুদের পোশাকসামগ্রী অনলাইনে বিক্রি করছেন। বাড়িতেই প্রথমে অস্থায়ীভাবে শিশুসামগ্রী তৈরি করতেন। বর্তমানে স্থায়ী কারখানা বানিয়েছেন। যেখানে ৭০ জন কর্মী কাজ করেন। এর মধ্যে ৫৫ জন মাসিক ভিত্তিতে এবং বাকিরা দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে কাজ করেন।
জিতুর কারখানায় ছয় মাস ধরে কাজ করেন মালেকা বেগম। তিনি বলেন, ‘কারখানায় শিশুদের পোশাক তৈরির কাজ করি। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কাজ করে মাসে সাত হাজার টাকা বেতন পাই।’ কারখানার কর্মীরা জানান, সর্বোচ্চ ১৪ হাজার থেকে সর্বনিম্ন ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতনে কারখানার কর্মীরা কাজ করেন। সোহেল মিয়া নামের এক কর্মী বলেন, ‘ইচ্ছা থাকলে অনেক কিছুই করা সম্ভব। শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েও জিতু রায় অনেক কিছু করে দেখিয়েছেন। তাঁর কারখানায় কাজ করে তাঁদের খাবার জুটছে।’

মন্তব্য( মন্তব্য)

profile
crime

আরও পড়ুন

crime

আরও পড়ুন

© স্বত্ব © ২০২৪ জেনারেশন বিডি

Development by : M4YOURS IT