অপূর্ব ইকো ট্যুরিজম প্রাকৃতিক পরিবেশে সুস্থ বিনোদনের এক আঁধার
প্রকাশ: ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ এ ১২:২১ PM
দাউদকান্দি উপজেলার প্লাবনভূমিতে আশির দশকে দেশে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে মাছচাষ শুরু করা হয়। যা বর্তমানে সারাদেশে একটি মডেল। দাউদকান্দিতে ধান ক্ষেতে বর্ষা মৌসুমে মাছ ও শুকনো মৌসুমে ধান চাষ করা হয়। দাউদকান্দির ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক-সংলগ্ন ইলিয়টগঞ্জ, পুটিয়া, রায়পুর, সিংগুলা, লক্ষ্মীপুর, সুহিলপুরসহ বিভিন্ন গ্রামে গড়ে উঠেছে মৎস্য প্রকল্প। ১১৫টি মৎস্য প্রকল্পে প্রতিবছর উৎপাদন হচ্ছে আড়াই হাজার কোটি টাকার মাছ। এখানে উৎপাদিত হয় রুই, মৃগেল, কাতলা, সিলভার কার্প, সরপুঁটি, তেলাপিয়াসহ বিভিন্ন জাতের মাছ। মাছে সকালের মিষ্টি আলো পড়ে চকচক করছে। লাফালাফি করছে তাজা মাছ। চলছে হাঁকডাক। নগদ টাকায় মাছ বিক্রি করে খুশি স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানযোগে মাছ চলে যাচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। স্থানীয় সূত্র মতে, জলাবদ্ধতার কারণে জমি বছরে আট-নয় মাস খালি পড়ে থাকত। এ এলাকায় এক ফসলের বেশি হয় না। এ জলাবদ্ধতা কাজে লাগিয়ে মাছ চাষ করা হয়। ১৯৮৬ সালে প্রথম প্লাবনভূমিতে মৎস্য চাষ শুরু করেন। এ মাছ উৎপাদন ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত লাখো মানুষ। সারা দেশে মাছ চাষে কুমিল্লা দ্বিতীয়। কুমিল্লার মধ্যে প্রথম দাউদকান্দি উপজেলা। এখানে প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে উৎপাদিত হয় ২ লাখ মেট্রিক টন মাছ। বিভিন্ন সমস্যার কারণে এই সম্ভাবনাময় খাতটি লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আগাতে পারছে না। খাবার হিসাবে গোবর, হাস-মুরগির লিটারসহ বিভিন্ন বর্জ্য ব্যবহার, বাজারে রেডি ফিডের উপর নির্ভরশীলতা, নিরাপদ উপকরন, পোনা, মৎস্য ঔষধ, পানি পরীক্ষার সুবিধা না থাকাসহ সহজ শর্তে পুজি বিনিয়োগের অপ্রাপ্তি। ২০২০ সালে সাসটেইনেবল এন্টারপ্রাইজ প্রকল্পের আওতায় ‘‘কুমিল্লা জেলা প্লাবনভূমি অঞ্চলে টেকসই মৎস্যচাষকেন্দ্রিক উদ্যোক্তা উন্নয়ন’’ শীর্ষক উপ-প্রকল্পটি শুরু হয়। পরিবেশ ও সমাজিক টেকসই ইতিবাচক পরিবর্তনের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। মৎস্যচাষীদের সক্ষমতা উন্নয়নে প্রযুক্তিগত, ব্যবসা সম্প্রসারণ, উন্নত বাজারে প্রবেশাধিকার নিশ্চিতকরনে পন্যের মান নিয়ন্ত্রন ও সাধারন সেবার মাধ্যমে বিভিন্ন সহায়তা প্রদান করে ক্লাষ্টারের সমস্যা লাঘবের ব্যবস্থা গ্রহন করেছে। তন্মধ্যে সুস্থ্য বিনোদন ও আয়ের বহুমাত্রিকিকরনে প্লাবনভূমি কেন্দ্রিক ট্যুরিজম উন্নয়ন অন্যতম। কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি উপজেলায় বিশ্বব্যাংক ও পিকেএসএফ অর্থায়নে প্রকল্পের আওতায় প্লাবনভূমি কেন্দ্রিক পর্যটন গড়ে উঠেছে। সাসটেইনেবল এন্টারপ্রাইজ প্রজেক্ট (এসইপি) এর অধীনে পিকেএসএফ-এর সহযোগী সংস্থা সেন্টার ফর কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট এসিসটেন্স (সিসিডিএ)। এই উপ-প্রকল্পের আওতায় মৎস্য চাষের পাশাপাশি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে কাজে লাগিয়ে বহুমাত্রিক আয় সৃষ্টির এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় প্লাবনভূমি মৎস্যচাষিদের একটি সমবায় গোষ্ঠী গঠন করে, প্রকল্প আয়-উৎপাদনকারী সাধারণ পরিষেবা ঋণ, প্রশিক্ষণ, এক্সপোজার ভিজিট এবং প্রযুক্তিগত পরিষেবা প্রদান করে পর্যটন কেন্দ্রের উন্নয়নে অগ্রসর হচ্ছে। পর্যটন সেবার জন্য বেশ কিছু ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই উপ-ক্ষেত্রগুলির অন্তর্ভুক্ত নিম্নরূপ:
- ভাসমান রেস্টুরেন্ট (জলের উপর)।
- ফাস্ট ফুড এবং কফি কর্নার।
- আলংকারিক প্যাডেল বোট এবং রোমাঞ্চকর কায়াকিং।
- কিডস জোন।
- রাতে থাকার সুবিধা।
- বিনোদন এবং ভাগ করা সুবিধা।
শান্ত জলের উপর একটি ভাসমান রেস্তোরাঁ রয়েছে, যা বাঁশ, কাঠ এবং একটি টিনের ছাদের সুরেলা মিশ্রণ থেকে তৈরি। একটি কাঠের সেতু সুন্দরভাবে উপকূল থেকে প্রসারিত, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই স্বর্গে প্রবেশের জন্য অতিথিদের আমন্ত্রণ জানায়। জল এবং সতেজ বাতাসের প্রশান্তিময় আলিঙ্গন দ্বারা বেষ্টিত, এটি সময়কে একটি সত্য স্বর্গে রূপান্তরিত করে। আপনি যখন জানালা তাকাচ্ছেন, একটি মন্ত্রমুগ্ধ দৃশ্য আপনার সামনে উন্মোচিত হচ্ছে: মাছ স্ফটিক-স্বচ্ছ জলে লাবণ্যময়ভাবে ছুটে বেড়াচ্ছে এবং খেলছে, যখন পাখিগুলি উড়ে বেড়ায়, মাঝে মাঝে তাদের নিজের ভরণ-পোষণের জন্য মাছ ধরতে নেমে আসে। এই অসাধারণ স্থাপনার মধ্যে রয়েছে স্থানীয় কৃষকের উৎপাদিত তাজা মাছ, সবুজ সবজি ও অন্যান্য খাবার। নৌকা ভ্রমন, মাছ ধরা ও বিভিন্ন রাইড চড়ার আনন্দ অপেক্ষা করছে। সামাজিক সমাবেশ বা অফিসিয়াল ইভেন্টের জন্যই হোক না কেন, এই স্থানটি বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান এবং সমাবেশের আয়োজনের ব্যবস্থা রয়েছে। ঢাকার অদূরে কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার ইলিয়টগঞ্জের পুটিয়া গ্রামে অবস্থিত অপূর্ব প্লাবনভূমি কেন্দ্রিক ট্যুরিজম (ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ৩০০ গজ উত্তরে) অবস্থিত। পরিবার, বন্ধু গ্রুপ, সহপাটি, অফিস সহকর্মীসহ চলে আসুন পানি প্রকৃতি ও মাছের অভয়রন্য খ্যাত প্লাবনভূমির এই ট্যুরিজমে। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের প্রয়াসকে এগিয়ে নিতে ও গ্রাম ভিত্তিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে আসুন সকলে অংশগ্রহন করি।
মন্তব্য( ০ মন্তব্য)