অনলাইনে বাংলা লেখার যত অ্যাপ ও এক্সটেনশন
প্রকাশ: ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ এ ১২:২১ PM
ইউনিকোড এর মাধ্যমে বাংলা লেখার সুযোগ তৈরি হওয়ার পর মোবাইল কিংবা কম্পিউটার ডিভাইসে সহজেই বাংলা লেখা যায়। বাংলা লেখার জন্য অ্যান্ড্রয়েড ও অ্যাপল ডিভাইসের রয়েছে আলাদা অ্যাপ। আবার যারা কম্পিউটারে কাজ করেন তাদের জন্যও রয়েছে নানা সুবিধা। অনেকে ভাবতেই পারেন এতগুলো অ্যাপ সম্পর্কে জেনে আখেরে লাভ কি। কিন্তু বড় পরিসরে অনেকেই ভেবে দেখেন না, আপনি যদি বিকল্প অ্যাপের কথা জানতে পারেন তাহলে বাংলা লেখার ক্ষেত্রে আপনার সুবিধা বাড়ে। এ বিষয়ে আমরা এতটাই অসচেতন যে ধরেই নেই অনলাইনে বাংলা লেখার জন্য নির্ভর করতে হবে কিবোর্ডের ওপর। কিছু অনলাইন টুলসের মাধ্যমেও বাংলা লেখা যেতে পারে। এই লেখাটিতে মূলত এসব কিবোর্ড সফটওয়ার এবং অনলাইন টুলের কথাই বলবো। বিজয় বায়ান্ন ও বিজয় ক্লাসিক অফিস কিংবা যেকোনো জায়গায় বাংলা লেখার ক্ষেত্রে এখনও সবচেয়ে জনপ্রিয় কিবোর্ড-সফটওয়ার বিজয়। বিজয়ে টাইপ করাটা একটু কঠিন মনে হতে পারে অনেকের কাছে কিন্তু একবার অভ্যস্ত হয়ে গেলে বাংলা লেখার ক্ষেত্রে কোনো প্রতিবন্ধকতাই থাকে না। বিজয় একমাত্র বাংলা কি-বোর্ড, যার সুতন্নি এমজেতে আছে ১১৮টি ফন্ট। যা দিয়ে খুব দ্রুতগতিতে এবং সহজে কম্পিউটারে বাংলা লেখা যায়। যুক্তাক্ষর লিখতেও কোনো সমস্যা হয় না। আবার বিজয়ে ১১৮টি স্বতন্ত্র ফন্ট এবং টাইপোগ্রাফি থাকার কারণে সাইনবোর্ড লেখার ক্ষেত্রে ইউনিকোড ব্যবহার করা যায় না। তাছাড়া ইউনিকোডে দ্রুত টাইপ করাটা কঠিন। সেক্ষেত্রে বিজয় সবচেয়ে কার্যকর। যুক্তবর্ণ ও জটিল শব্দ লেখার ক্ষেত্রেও কোনো জটিলতার মুখোমুখি হতে হয় না। তবে বিজয়ের আলাদা ইউনিকোড অপশনও চালু আছে। অনলাইনে যারা ইউনিকোডে লিখতে চান তারা সহজেই বিজয় কিবোর্ড ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলা লিখতে পারেন। প্রথমে শুধু টাইপিং এর সঙ্গে অভ্যস্ত হতে হবে আপনায়। পত্র-পত্রিকায় যারা চাকরি করতে চান তাদের জন্য বিজয়ে দক্ষতা থাকাটা জরুরি হয়ে পড়ে অনেক জায়গাতেই।
অভ্র কিবোর্ড উইন্ডোজ প্লাটফর্মে ইউনিকোড দিয়ে লেখা সহজ নয়। বিশেষয় বিজয়ের যে ইউনিকোড রয়েছে তা দিয়ে দ্রুত টাইপ করতে গেলে অনেক সময় যুক্তাক্ষর ভেঙে যায়। অনেক সময় শব্দগুলোও ঠিকমতো বসে না। ঠিক এখানেই অভ্র কিবোর্ড বাজিমাত করেছে। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ছাত্র মেহেদী হাসান খান ২০০৩ সালের ২৬ মার্চ ইংরেজি হরফে বাংলা লেখার কি-বোর্ড অভ্র সফটওয়্যার প্রদর্শন করেন। এই কি-বোর্ডে ইংরেজি হরফে বাংলা শব্দ বানান করে লিখলে সেটা বাংলায় দেখা যায়। যারা অনলাইনে চ্যাট করতে চান, সার্চ ইঞ্জিনে কিছু একটা লিখে সার্চ করতে চান, তাদের কাছে দ্রুত জনপ্রিয় হয় অভ্র। অভ্র উদ্ভাবনের একটি গল্প বেশ প্রচলিত। গল্পটি ঠিক এমন, ২০০৩ সালের বইমেলায় ‘বাংলা ইনভেনশন থ্রু ওপেন সোর্স’ বা বায়োস নামের একটি সংগঠন বাংলা লিনাক্স নামে একটি প্রযুক্তির দেখান। এই প্রযুক্তিতে কম্পিউটারে মেনু, ফোল্ডার এবং ফাইলের নাম বাংলায় লেখা যায় কোনো ঝামেলা ছাড়া। লিনাক্স দেখে মুগ্ধ হন সে সময়ে ১৮ বছর বয়সী মেহেদী হাসান খান। পরে অনলাইনে স্বচ্ছন্দে বাংলা লেখা যায়, এমন একটি সফটওয়্যার এবং কি-বোর্ড তৈরির কাজ শুরু করেন। ২০০৭ সালেই অমিক্রন ল্যাবের উদ্যোগে তিনি এ কিবোর্ড বানানোর কাজ শুরু করেন। প্রথমে অভ্র অনলাইনে উন্মুক্ত হলে বিজয়ের আদলে ইউনিজয় নামে ব্যবহারকারীদের কাছে আসে। কিন্তু বিজয়ের পেটেন্ট ছিল এর উদ্ভাবক মোস্তাফা জব্বারের, সে কারণে তিনি গুগলের কাছে কপিরাইট ইস্যুকে অভ্র সফটওয়্যারে বিজয় লে-আউট ব্যবহারের আপত্তি জানান। পরে গুগল এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিলে অভ্র থেকে ইউনিজয় সরিয়ে জাতীয় এবং প্রভাত নামে দুটি লে-আউট যুক্ত করা হয়। তবে যে জাতীয় লে-আউটটি বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল থেকে করা হয়েছে, সেটিও মূলত বিজয়েরই লে-আউট। এখানে পরিবর্তন বলতে কিবোর্ডের দুটি বোতামে স্থানান্তরের মাধ্যমে বাকিটা হুবহু বিজয়ের লে-আউটই রাখা হয়েছে। যাদের কাছে বিজয় জটিল মনে হয় তাদের কাছে অভ্র খুবই জনপ্রিয়। বিশেষত ইংরেজি বর্ণমালার মাধ্যমে বাংলিশ স্টাইলেই এখানে টাইপ করলে বাংলা লেখা যায়। তাই দ্রুতই অভ্র টাইপিং এর সঙ্গে অভ্যস্ত হওয়া যায়। তবে ফন্টের নিরাপত্তার হিসেবে বিজয়ই বেশি জনপ্রিয়।
মোবাইল অ্যাপ রিডমিক মোবাইলে যারা বাংলা লিখেন তারা প্লে স্টোরে গেলে দ্বিধা ছাড়াই রিডমিক কিবোর্ড সার্চ দেন। ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠা করেন রিদমিক ল্যাব। প্রথম থেকেই রিদমিক ল্যাব থেকে যে অ্যানড্রয়েড স্মার্টফোনের জন্য নির্মিত রিদমিক কি-বোর্ড অ্যানড্রয়েড ব্যবহারকারীদের কাছে জনপ্রিয় হতে শুরু করে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র শামীম হাসনাত এ কিবোর্ডের উদ্ভাবক। সহজ ভাষায় এটি অভ্র কিবোর্ডের অ্যান্ড্রয়েড ভার্সন। এই সফটওয়ারটি অ্যাপল ডিভাইসের জন্যও রয়েছে। স্মার্টফোনে এই কিবোর্ড ব্যবহার প্রচলিত হওয়ার পর অনেকেই ভার্চুয়াল জগতে বাংলা লিখতে পারেন। রিডমিকেও বাংলা লেখা অনেক সহজ। যদিও এখানে কয়েকটি লে আউট রয়েছে। শুধু তাই নয়, কথা বলে বাংলা লেখারও সুযোগ রয়েছে এ কিবোর্ডে। যেহেতু কম্পিউটারের জন্য অভ্র রয়েছে তাই রিডমিকের আলাদা কম্পিউটার ভার্সন করা হয়নি। রিডমিকের কারণে অনেক লেখক মোবাইলেই বইয়ের কাজ সম্পন্ন করছেন। লেখালেখি, সম্পাদনা থেকে শুরু করে বাংলায় যোগাযোগের অবারিত দ্বার উন্মুক্ত হয়েছে।
মায়াবি কিবোর্ড মোবাইলে লেখার ক্ষেত্রে রিডমিক ক্লাসিক যখন ছিল বাগবহুল তখন অনেকেই মায়াবি কিবোর্ড ব্যবহার করতেন। এখনও এই সফটওয়ারটি রয়েছে। তবে সফটওয়ারটিতে ভালো আপডেট নেই। যারা লোয়ার কনফিগারেশনের মোবাইল ব্যবহার করেন তারা মায়াবি কিবোর্ড ইনস্টল করতে পারেন।
বাংলা লেখার কিছু ওয়েবসাইট ধরুন আপনি কারও কম্পিউটার ব্যবহার করছেন। সেখানে দেখলেন কোনো বাংলা কিবোর্ড নেই। এখন তার কম্পিউটারে একটি সফটওয়ার ইনস্টল করাটা ঠিক হবে না। কিন্তু আপনার তো বাংলায় লিখতে হবে। উপায় কি? সমাধান বেশ সহজ। অনলাইনে কিছু সফটওয়ার রয়েছে যেগুলোতে ট্রান্সলিটারেশনের মাধ্যমে বাংলা লেখা সম্ভব। এজন্য আপনায় কোনো সফটওয়ার ইনস্টল দিতে হবে না এবং কোনো বাড়তি এক্সটেনশনও নিতে হবে না। শুধু ব্রাউজারে গিয়ে এসব ওয়েবসাইটে চলে যান তাহলেই হবে। অনলাইনে এমন অনেক ওয়েবসাইট রয়েছে। তারমধ্যে avro.im এবং ইংলিশ টু বাংলা কনভার্টার এই দুটি ওয়েবসাইট ভীষণ জনপ্রিয়। আজকাল অনেকেই এসব ওয়েবসাইটে বাংলা লিখছেন। এভাবে লেখার একটি সুবিধা হলো আলাদা করে বাংলা কিবোর্ড ইনস্টল করতে হয় না।
মন্তব্য( ০ মন্তব্য)