বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্নাতক/স্নাতকোত্তর শেষ করে পিএইচডিতে আগ্রহীদের মূলত তিন ধরনের লক্ষ্য থাকে। প্রথমত এই পিএইচডিতে ভর্তি হওয়ার পর গবেষণার মাধ্যমে নতুন জ্ঞান আহরণ করা, দ্বিতীয়ত লব্ধ জ্ঞানের প্রয়োগ ঘটিয়ে নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করা এবং বিশেষজ্ঞ হওয়ার মতো দক্ষতা তৈরি করা। এই তিনের সমন্বয়ে একটি নির্ধারিত সময় ফ্রেমের আওতায় গবেষকেরা পিএইচডির শিক্ষার্থীরা তত্ত্বাবধায়কের বাইরে এসে পরবর্তীতে স্বাধীনভাবে গবেষণার ক্ষেত্র তৈরি করার উদ্দেশ্যে একাডেমিক সর্বোচ্চ এই ডিগ্রি অর্জনমুখী হোন। স্বীয় ক্ষেত্রে বিশেষত্ব থাকার সুবাদে একজন পিএইচডিধারীদের একাডেমিক কিংবা ইন্ডাস্ট্রিয়াল কাজে দক্ষতা প্রয়োগের সুযোগ মিলে। একাডেমিক পর্যায়ে থাকতে হলে পিএইচডির পর আরও প্রশিক্ষণের প্রয়োজন পড়ে, ফলে এই সব ডিগ্রিধারীদের একাডেমিশিয়ান হওয়ার মধ্যবর্তী সময়ে পোস্টডক্টরাল গবেষণার সুযোগ থাকা বাঞ্ছনীয় হয়ে পড়ে। বাংলাদেশেও উচ্চশিক্ষায় আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। এই দেশেও সাম্প্রতিক সময়ে জ্যামিতিক হারে পিএইচডি সনদধারীদের সংখ্যা বাড়ছে। প্রতি বছর দেশের বাইরে কয়েক হাজার ছেলে-মেয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য যাচ্ছে। আমাদের অভ্যন্তরীণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্রমেই পিএইচডির শিক্ষার্থী ও সনদধারী বাড়ছে। সরকারও বিভিন্ন স্কলারশিপের মাধ্যমে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পিএইচডির শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছে। এটি সত্যি একটি ভালো দিক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনের সর্বশেষ (২০২০) সালের পরিসংখ্যান মতে, দেশের ৪৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩ হাজার ৬৪৬ জন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ১২ জন এবং উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫ জন শিক্ষার্থী পিএইচডিতে অধ্যয়নরত যাদের পাশের হার গড় ৮০ শতাংশের ওপর। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর বলছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গত দশ বছরে (২০১০-২০) মোট ৭৫৩ জনকে পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করা হয়েছে। তিন দশক আগে যে বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে ২২ শিক্ষার্থী পিএইচডি ডিগ্রি পেত, সেখানে প্রায় ত্রিশ বছরে ত্রিশগুণ পিএইচডি ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার প্রতিফলন বলে প্রতীয়মান হলেও এই সব পিএইচডি ডিগ্রির উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। আমাদের প্রতিবেশী ভারত কিংবা নেপালে পিএইচডি শেষ করার পর দেশের বাইরে পোস্টডক্টরাল কিংবা ইন্ডাস্ট্রিয়াল চাকরি পেতে বেগ পেতে হয় না। এমনকি বাংলাদেশ থেকেও প্রতিবছর পিএইচডি করার জন্য ভারতের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা ভিড়ছেন।