স্বভাব নষ্ট অভাবী জনতা নিয়ে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন ও তার বাস্তবতা বিশ্লেষণ
প্রকাশ: ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ এ ১২:২১ PM
শোনা যাচ্ছে আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রের তালিকায় নিজেদের নাম লেখাতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তার আগে ২০২৬ সালের মধ্যে উন্নীত হতে চায় মধ্যম আয়ের দেশে। এই প্রকারের স্বপ্ন দেখা নিঃসন্দেহে প্রসংশার দাবী রাখে। দেশকে নিয়ে এর চেয়ে উত্তম স্বপ্ন আর হতে পারে না। রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারকদের সাধুবাদ জানাই। ভবিষ্যতের একটি উন্নত রাষ্ট্রের নাগরিক ভাবলে নিজের মধ্যে অনেক ভালো লাগা কাজ করে। কিন্তু রাষ্ট্রের নাগরিকদের অভাব আর স্বভাব দেখলে এই ভালো লাগার অনুভূতিটা বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারি না। কেননা এই অভাবী ও স্বভাব নষ্ট নাগরিকদের নিয়ে বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্র বানানো কাগজে কলমে হয়তো সম্ভব, কিন্তু বাস্তবে এর সম্ভাব্যতা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। কারণ উন্নত রাষ্ট্রের তালিকায় উঠতে হলে শুধুমাত্র নাগরিকদের আভাব দূর করলেই হয় না, বরং তাদের স্বভাবও সুন্দর করা আবশ্যক। অর্থনীতিবিদগণ রাষ্ট্রের উন্নতি পরিমাপের জন্য কতগুলো মানদণ্ডের কথা উল্লেখ করে থাকেন যার মধ্যে মাথাপিছু আয়, মোট জাতীয় আয়, মোট দেশজ আয় ইত্যাদির কথা বেশি শোনা যায়। তবে সাথে তারা আরো কতগুলো মানদণ্ডের কথা বলে থাকেন যেমন - শিক্ষার হার ও মান বৃদ্ধি করা, বেকারত্ব হ্রাস করা, আয় বৈষম্য হ্রাস করা, সর্বস্তরে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা, রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে জনগণের অংশগ্রহন নিশ্চিত করা, ব্যক্তির মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করা, রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক পর্যায়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, সর্বস্তরের মানুষের জন্য স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা, রাষ্ট্রীয় অন্যান্য সেবা সবার জন্য সমানভাবে উন্মোক্ত করা, রাষ্ট্রীয় কাজে নাগরিকদের সম্পৃক্ত করা, নাগরিকদের যুক্তিশীল ও দায়িত্বশীল আচরণে উদ্বুদ্ধ করা ইত্যাদি। তবে বর্তমান সময়ে পরিবেশ ও জলবায়ু উন্নয়ন এবং সম্পদের দক্ষ ব্যবহারের কথাও ব্যাপকভাবে উচ্চারিত হচ্ছে। কিন্তু আমাদের ১০০ নম্বরের অর্থনীতিবিদরা যারা শিক্ষা জীবনে অথবা চাকরি জীবনে ১০০ নম্বরের অর্থনীতি পাশ করে এসে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে অধিষ্ঠিত হয়েছে তাদেরকে কেবল মাথাপিছু আয়, মোট জাতীয় আয়, মোট দেশজ আয় এসবের উদ্ধৃতি দিতে দেখা যায় যারা রাষ্ট্রের উন্নতি বলতে কেবল মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিকে বুঝে থাকেন বা অর্থের মাপকাঠিতে উন্নতি মাপেন। বাকি বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলতে তেমন একটা শুনা যায় না। যেহেতু বাকি বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা কম, সেহেতু সেসব বিষয়ে দেশে কতটুকু কাজ হয় তা সহজেই অনুমেয়। ফলে উন্নয়নের অন্যান্য মাপকাঠিতে সমাজের তথা রাষ্ট্রের অগ্রগতি অন্ধকারে। অন্ধকারে মানে এই সংক্রান্ত অগ্রগতির কোন উপাত্ত নেই। তবে নাগরিকদের স্বভাব দেখলে অবস্থা কিছুটা অনুমান করা যায়। যাহোক যেহেতু নীতিনির্ধারকগণ রাষ্ট্রের আর্থিক উন্নতির কথা ফলাও করে প্রচার করে থাকেন, সেহেতু নাগরিকরাও নিজেদের উন্নতি মাপেন অর্থের মানদণ্ডে। যে কারণে তারা অর্থের অভাব পূরণ করতে চান যে কোন উপায়ে। আর এই অর্থের অভাব মানুষের এমনই এক প্রকারের অভাব যা কোনদিনও পূরণ করা যায় না। ফলে এই অসীম অভাব পূরণ করতে গিয়ে মানুষের স্বভাব নষ্ট হয়। বাংলায় একটি প্রবাদও আছে যে অভাবে স্বভাব নষ্ট। এই রাষ্ট্রের নাগরিকদের স্বভাব নিয়ে বিস্তারিত লিখতে গেলে একটি বই লেখা যাবে। এত কিছু না লিখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একটি উক্তি লিখলেই আশা করি বাকিটুকু বুঝতে কারো অসুবিধা হবে না। আবার অমাদের নিজের স্বভাব চরিত্রের দিকে তাকালেও বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায়। যাহোক তিনি একদিন দুঃখের সাথে বলেছিলেন, শেখ হাসিনা ছাড়া এদেশের বাকি সবাইকে অর্থ দিয়ে কেনা যায়। তার বক্তব্য যদি শতভাগ সত্য না ও হয়, নব্বই শতাংশও সত্য হয় তা হলে অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়! যে দেশের নাগরিকদের মধ্যে অর্থের কাছে বিক্রি হয়ে যাওয়া স্বভাব বিদ্যমান, ব্যক্তিগত পকেট ভর্তি করার জন্য যে কোন পকেট কাটতে পারে যারা, তাদের নিয়ে রাষ্ট্রের উন্নতি কতটুকু হতে পারে? পরিশ্রম ছাড়াই যে দেশের নাগরিকরা বিপথে অর্থ উপার্জনে অভ্যস্ত এবং বিপথে উপার্জিত অর্থ বিদেশে পাচার করতে যাদের বিবেকে বাধে না, সেই চরম মাত্রার স্বভাব নষ্ট অভাবীদের নিয়ে কি আদৌ বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব? তাছাড়া উন্নতির অন্যান্য সূচকের অগ্রগতি কিভাবে হবে তার সুনির্দিষ্ট রূপরেখা কী আমাদের কাছে আছে? রাষ্ট্রের নাগরিকরা যারা নিজেদের তথা রাষ্ট্রের উন্নতির জন্য কাজ করবে তারা কী এই বিষয়ে আবগত আছে? জানিনা ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের মানুষ কতটুকু সুনাগরিক হয়ে উঠতে পারবে। তবে আমি আন্তরিকভাবেই চাই এদেশের মানুষ সমস্ত সূচকে সর্বাধিক নম্বর পেয়ে উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত করে বিশে^র দরবারে সম্মানিত হোক। লেখকঃ উদ্যোক্তা অর্থনীতিবিদ চেয়ারম্যান, এন্টারপ্রাইজ ৩৬০ লিমিটেড ও স্কুল অব অন্ট্রুপ্রেনিউরশীপ ডেভেলপমেন্ট।
মন্তব্য( ০ মন্তব্য)