কোরফিল্ডের টেরাকোটার সৌন্দর্যে মুগ্ধ সবাই
প্রকাশ: ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ এ ১২:২১ PM
২০১১ সালে যাত্রা শুরু করে দেশীয় প্রতিষ্ঠান কোরফিল্ড। প্রতিষ্ঠানটি টেরাকোটা নিয়ে কাজ করে। তরুণ উদ্যোক্তা জাহিদুল ইসলামের হাত ধরে যাত্রা শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। তিনি ছিলেন কোরফিল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। পোড়ামাটির তৈরি বিভিন্ন পণ্য নিয়ে কাজ করা এ প্রতিষ্ঠানের বয়স এক দশক পেরিয়ে গেছে। এর মধ্যে নানা চড়াই-উতরাই পার হতে হয় তাদের। করোনাকালে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে আসে। সেই ধাক্কা কাটিয়ে এখন আবারও ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। তাতে প্রতি মাসেই বাড়ছে বেচাবিক্রি। প্রায় এক দশক আগে সদ্য বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করা জাহিদুল ইসলাম এ কাজ শুরু করেন অনেকটা শখের বশে। মাত্র পাঁচ লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে নামেন টেরাকোটার ব্যবসায়। সাভারের কারখানায় পোড়ামাটির তৈরি টেরাকোটার যেসব পণ্য জাহিদুল ইসলাম তৈরি করেন, এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের মানচিত্র, পয়লা বৈশাখসংক্রান্ত পণ্য, বঙ্গবন্ধুর তর্জনী, মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসভিত্তিক নানা শিল্পকর্ম। আরও আছে ফুলের পাপড়ি, বাগিচা, কার্জন হল, ইসলামিক ক্যালিগ্রাফি, হোম ডেকরসহ নানা পদের কাজ। পোড়ামাটি দিয়ে ফার্নিচারের জন্য নকশাও তৈরি করছে প্রতিষ্ঠানটি। অনেকটা হারিয়ে যাওয়া এই শিল্প নিয়ে কাজ করার কারণ জানতে চাইলে জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘শুরুর দিকে তেমন একটা সাড়া না পেলেও মানুষ বেশ আগ্রহ নিয়েই আমাদের পণ্য কেনেন। এটা আমাদের অনুপ্রাণিত করে।’ করোনার আগে প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক বেচাবিক্রি ছিল এক কোটি টাকার মতো। কিন্তু করোনায় ব্যবসা স্থবির হয়ে পড়ে। এরপর ঘুরে দাঁড়াতে নানা উদ্যোগ নেন জাহিদুল ইসলাম। অনলাইনভিত্তিক বেচাকেনার পরিধি বাড়াতে থাকেন। বিক্রয় ও বিপণনের কাজটি আরও ভালোভাবে করতে এন্টারপ্রাইজ ৩৬০ লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হন। এন্টারপ্রাইজ ৩৬০-এর প্রধান নির্বাহী আমান উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশে তো বটেই, বিদেশেও টেরাকোটার ভালো চাহিদা আছে। এ জন্য কোরফিল্ডের সঙ্গে আমাদের যুক্ত হওয়া। সৃজনশীল এসব পণ্যের মাধ্যমে দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দেওয়া আমাদের লক্ষ্য।’ জাহিদুল ইসলামের হাত ধরে যখন কোরফিল্ডের যাত্রা শুরু হয়, তখন সব মিলে কর্মী ছিলেন ৩ জন। উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন ১৩ জন। শিল্পী রয়েছেন ৮ জন। প্রতিষ্ঠানটির মূল কারখানা সাভারের হেমায়েতপুরে। মিরপুরের কালশীতে রয়েছে গবেষণা ও উন্নয়নকেন্দ্র। পণ্যের নকশার কাজটি হয় এলিফ্যান্ট রোডের এন্টারপ্রাইজ ৩৬০ লিমিটেডের কার্যালয়ে। বর্তমানে ৭০টির বেশি পণ্য নিয়ে কাজ করছে কোরফিল্ড। জাহিদুল ইসলাম জানান, একটি পণ্য তৈরিতে সব মিলিয়ে ৪০ থেকে ৪৫ দিন সময় লাগে। কোনো ক্রেতা চাইলে তাঁর পছন্দমতো ধারণা দিয়েও কাজ করিয়ে নিতে পারবেন। তাতে প্রতি বর্গফুটের জন্য খরচ পড়ে ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা। বর্তমানে কোরফিল্ডের সবচেয়ে কম মূল্যের পণ্যটির দাম ৫৫০ টাকা। আর সবচেয়ে দামি পণ্যের দাম ৯০ হাজার টাকা। এসব পণ্যের স্থায়িত্বও বেশ ভালো। কোরফিল্ডের দাবি, একটু যত্ন নিলে এসব পণ্য ২০ বছর ব্যবহার করা যাবে অনায়াসেই।
মন্তব্য( ০ মন্তব্য)