logo

ছেলের বিয়েতে কেন এত খরচা করছেন আম্বানি

Azad

প্রকাশ: ৭ মার্চ, ২০২৪ এ ৪:০০ PM

ছেলের বিয়েতে কেন এত খরচা করছেন আম্বানি
ভারতের শীর্ষ ধনী মুকেশ আম্বানির ছোট ছেলে অনন্ত আম্বানির প্রাক্‌-বিয়ের অনুষ্ঠান হয় ১ থেকে ৩ মার্চ

 

আম্বানিদের পৈতৃক বাড়ি গুজরাটে। মোদির গ্রামের বাড়িও গুজরাট। প্রাক্‌-বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য গুজরাটের জামনগরকে বেছে নেওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে মোদির একটি আহ্বানে সাড়া দেওয়ার কথা বলেছেন অনন্ত।

মাস কয়েক আগেই ভারতের ধনীদের বিদেশে না গিয়ে দেশের মাটিতে বিয়ের আয়োজন (ওয়েড ইন ইন্ডিয়া) করতে আহ্বান জানিয়েছিলেন মোদি। লোকসভা নির্বাচন সামনে রেখে তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে যে নজির আম্বানিরা সৃষ্টি করলেন, তা ইতিহাস হয়ে থাকবে।

ইদানীং মুকেশকেও মোদির প্রশংসায় পঞ্চমুখ থাকতে দেখা যাচ্ছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে তিনি ‘ভাইব্রেন্ট গুজরাট গ্লোবাল সামিটে’ অংশ নিয়ে জোর গলায় বলেছিলেন, ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল প্রধানমন্ত্রী মোদি। তিনি অসম্ভবকে সম্ভব করেন।

এলাহি কাণ্ড। বাংলা ব্যাকরণ বইয়ে পড়া বাগধারা। বইয়ে পড়ে এলাহি কাণ্ডের ব্যাপ্তি বোঝার উপায় নেই।

তবে ভারতের শীর্ষ ধনী মুকেশ আম্বানির কল্যাণে এত দিনে বুঝি এলাহি কাণ্ডের ব্যাপারটি সত্যিকার অর্থেই বোঝা গেল।

মুকেশের ছোট ছেলে অনন্ত আম্বানি। তিনি বিয়ে করতে যাচ্ছেন ভারতের শিল্পপতি বীরেন মার্চেন্টের মেয়ে রাধিকা মার্চেন্টকে।

ভারতের গুজরাটের জামনগরে ১ থেকে ৩ মার্চ অনন্ত-রাধিকার জমকালো প্রাক্-বিয়ের অনুষ্ঠান হয়ে গেল।

prothomalo-bangla_2024-03_09a144c8-7f91-4c02-a51b-ebb679c53620_Reliance

তিন দিনের এই অনুষ্ঠানে দেশ-বিদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য-শিল্প, রাজনীতি, ক্রীড়া, বিনোদনসহ নানা অঙ্গনের খ্যাতনামা, ওজনদার ব্যক্তিরা যোগ দিয়েছেন।

প্রায় ১ হাজার ২০০ অতিথির মধ্যে অনেক বিশ্বখ্যাত ব্যবসায়িক ব্যক্তিত্ব ছিলেন। এই যেমন মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস, মেটার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মার্ক জাকারবার্গ, অ্যালফাবেটের সিইও সুন্দর পিচাই, মর্গ্যান স্ট্যানলির সিইও টেড পিক, ডিজনির সিইও বব ইগার, ব্ল্যাকরকের সিইও ল্যারি ফিঙ্ক, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মেয়ে ইভাঙ্কা ট্রাম্প ও তাঁর স্বামী জেরার্ড কুশনার।

আয়োজনের অতি জৌলুশ, নামীদামি অতিথিদের উপস্থিতির কারণে প্রাক্-বিয়ের এই অনুষ্ঠান বিশ্ববাসীর নজর কাড়ে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ফলাও প্রচার পায় এ অনুষ্ঠান।

আম্বানিদের এ অনুষ্ঠানে পারফরম করার জন্য হলিউডের জনপ্রিয় পপ গায়িকা রিয়ানার মতো তারকাকে বিপুল পারিশ্রমিক দিয়ে জামনগরে আনা হয়েছে। তিনি ছাড়াও বিনোদনজগতের অনেক দেশি-বিদেশি তারকা অনুষ্ঠানে পারফর্ম করেন।

বিপুল খরচাপাতির কথা বিবেচনায় নিয়ে অনেকেই বলছেন, এ অনুষ্ঠান অর্থের নগ্ন, জঘন্য অপচয়ের প্রদর্শনী ছাড়া আর কিছু নয়।

এই মতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বিষয়টিকে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখারও বাস্তবিক সুযোগ রয়েছে। ব্যবসায়ী পরিবার আম্বানিদের এই বিয়েসংক্রান্ত অনুষ্ঠানের একটা ‘রাজনৈতিক-অর্থনীতি’ আছে। এখন আমরা সেদিকেই দৃষ্টি দেব। তার আগে কিছু পরিসংখ্যান দেখে নেওয়া যাক।

মার্কিন প্রভাবশালী ফোর্বস সাময়িকীর তথ্যমতে, এশিয়ার শীর্ষ ধনী মুকেশ আম্বানি। তাঁর সম্পদের পরিমাণ ১১৭ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর বিশ্বে ধনীর তালিকায় তাঁর অবস্থান নবম।

পরিসংখ্যান নিয়ে কাজ করা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য বলছে, এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যার দেশ ভারত। দেশটির জনসংখ্যা এখন ১৪৩ কোটি।

ভারতের সরকারি চিন্তন প্রতিষ্ঠান নীতি আয়োগের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, দেশটিতে ২০২২-২৩ সালে দারিদ্র্যের হার দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ। তবে এই সূচকের যথার্থতা-বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে খোদ ভারতীয় বিশেষজ্ঞদের মধ্যেই প্রশ্ন আছে।

 

গত বছরের অক্টোবরে প্রকাশিত বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচকে ১২৫টি দেশের মধ্যে ভারতের অবস্থান ছিল ১১১তম। বাংলাদেশের অবস্থান ৮১তম। অর্থাৎ, ক্ষুধা মেটানোর সক্ষমতার দিক থেকে প্রতিবেশী বাংলাদেশের চেয়ে বেশ পিছিয়ে ভারত।

এ–ই যখন অবস্থা, তখন রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মুকেশ তাঁর ছোট ছেলে অনন্তর জন্য চোখধাঁধানো প্রাক্-বিয়ের আয়োজন সারলেন। এ অনুষ্ঠানকে ‘বিয়ের মহড়া’ বলা যায়। বিয়ে হবে আগামী জুলাইয়ে।

ইন্ডিয়া টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, অনন্ত-রাধিকার প্রাক্-বিয়ের আয়োজনের বাজেট ছিল ১ হাজার ২০০ কোটি রুপির বেশি। বিয়ের অনুষ্ঠান এখনো বাকি। ফলে এই বিয়ে বাবদ আম্বানিদের মোট খরচের পরিমাণ যে কত দাঁড়াবে, তা ভেবে কারও চোখ কপালে ওঠা অস্বাভাবিক কিছু নয়।

প্রাক্‌-বিয়ের অনুষ্ঠানে বিশেষ করে বিশ্বের নামীদামি ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, বিনিয়োগকারী, ব্যাংকার, উদ্যোক্তা, সিইওদের নিমন্ত্রণ করে নিয়ে আসার বিপুল ‘অর্থনৈতিক মূল্য’ আছে। এখান থেকে নতুন ব্যবসা-বিনিয়োগ-উদ্যোগের সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে, যা আদতে প্রসারিত করতে পারে রিলায়েন্সের সাম্রাজ্যকে।

এই মহাআয়োজন নিঃসন্দেহে আম্বানি তথা রিলায়েন্সের গ্রহণযোগ্যতাকে আরও বাড়াবে বলেই ধারণা করি। অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ইতিমধ্যে রিলায়েন্সের ব্র্যান্ডিং, মার্কেটিং ভারত তো বটেই, সারা বিশ্বে দারুণভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।

এই অনুষ্ঠানের ব্যাপক সামাজিক মূল্য আছে, যাকে বলা হয় সামাজিক মূলধন (সোশ্যাল ক্যাপিটাল)। ভবিষ্যতে এই মূলধনের সুবিধা আম্বানিদের তহবিলেই জমা হবে।

এখানে রাজনীতিও আছে। অনন্ত তো আগে থেকেই ‘মোদি-ভক্ত’। ২০১৯ সালের এপ্রিলে মুম্বাইয়ে ভারতের বিজেপি সরকারের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নির্বাচনী জনসভায় গিয়ে একদম সামনের সারিতে বসেছিলেন অনন্ত। তখন তিনি গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদির কথা শুনতে, দেশকে সমর্থন জানাতে এই সভায় গিয়েছিলেন।

বোঝাই যাচ্ছে, মোদিকে তুষ্ট করার সর্বাত্মক চেষ্টা আম্বানিরা দারুণভাবেই করে যাচ্ছেন। ব্যবসায়ীদের এ ধরনের চেষ্টার আসল উদ্দেশ্য যে কী, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

কথিত প্রাক্‌-বিয়েতে আম্বানিরা যে কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ ঢেলেছেন, সামনে যে আরও অর্থ খরচ করবেন, তাকে সাধারণের চোখে ‘অপচয়’ বলে মনে হতে পারে। তবে পুরোদস্তুর ব্যবসায়ী আম্বানি পরিবারের প্রেক্ষাপটে বলতে হয়, এই খরচ আসলে বিনিয়োগ। এই বিনিয়োগ ভবিষ্যতে বহুগুণে আম্বানিদের হাতেই ফিরে আসবে বলে ধারণা করি।

মন্তব্য( মন্তব্য)

profile
crime

ভারত নিয়ে আরও পড়ুন

crime

ভারত নিয়ে আরও পড়ুন

© স্বত্ব © ২০২৪ জেনারেশন বিডি

Development by : M4YOURS IT