logo

ঢাবিতে অ্যাকশনিস্ট ফাউন্ডেশনের সিম্পোজিয়াম অনুষ্ঠিত

প্রকাশ: ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ এ ১২:২১ PM

ঢাবিতে অ্যাকশনিস্ট ফাউন্ডেশনের সিম্পোজিয়াম অনুষ্ঠিত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাকশনিস্ট ফাউন্ডেশন এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এর যৌথ উদ্যোগে "ড্রাগ অ্যাডিকশন অ্যান্ড সুসাইড প্রিভেনশন: রোল অব মেন্টাল ওয়েলবিং ইন ওইমেন এমপাওয়ারমেন্ট" শীর্ষক সিম্পোজিয়াম অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার বিকেল তিনটা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরসি মজুমদার আর্টস অডিটোরিয়ামে এই সিম্পোজিয়াম শুরু হয়ে চলে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত। পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম সিম্পোজিয়ামে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। আর বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মেহজাবীন হক প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন। তিনি মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব এবং আত্মহত্যা প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের অবগত করান। তিনি বলেন, "সমাজে চলতে গেলে অনেকে অনেক কথা বলবে। এগুলো নিয়ে ভাবার দরকার নেই। কোন ঘটনাতে আমরা রিয়্যাক্ট না করে যদি সেসবে রেসপন্স করি তখন বিষয়টাকে হ্যান্ডল করা সহজ হয়। আমরা চাইলে এই পরিবর্তনগুলো আমাদের নিজেদের মধ্যে আমরা নিয়ে আসতে পারি।" অধ্যাপক ড. মেহজাবীন হক আরো বলেন, "ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন প্রতিভাবান শিক্ষার্থী যখন আত্মহত্যা করে সেটা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক বিষয়। কারণ হিসেবে শিক্ষার্থীরা বলে, তাদের মনের কথা শুনার কেউ নেই। তাদের কথা কেউ শুনছে না। সুতরাং আমাদের তাদের কথা শুনতে হবে।" তিনি বলেন, "ড্রাগ এডিকশন বা আত্মহত্যা এগুলো কারও একার পক্ষে প্রতিরোধ করা সম্ভব না। পরিবার, বন্ধুবান্ধব বা শিক্ষকদের এগিয়ে আসতে হবে। যারা আত্মহত্যা করে তাদের মরে যাওয়া উদ্দেশ্য না। তারা মূলত পেইন থেকে বাঁচতে চায়। সুতরাং তাদের পেইন যদি দূর করে দেওয়া অথবা অন্তত কমানো যায় তাহলে তাদের বাঁচানো যাবে। সুতরাং আমাদের চেষ্টা করতে হবে যেন তাদের পেইন দূর করা যায়। এজন্য সকলকে সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসতে হবে।" এরপর তিনি শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তারানা হালিম বলেন, "বাংলাদেশ মোট জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি নারী। সুতরাং আমরা যদি সেই নারীদের দিকে না তাকায়, তাদের মানসিক স্বাস্থ্য যদি ভালো না থাকে তাহলে একটি দক্ষ জনগোষ্ঠী বা সাফল্যমন্ডিত জনগোষ্ঠী কখনোই তৈরি হবে না। কারণ একটি দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে সুস্থ না রাখলে সে দেশ কখনোই এগিয়ে যেতে পারবেনা। এটি চরম একটি সত্য কথা। " তিনি বলেন, "আমরা যারা নারী আছি তাদের বড় একটি দুর্ভাগ্য হচ্ছে আমাদের প্রতি পদক্ষেপে প্রমাণ করতে হয় যে আমরা পারি। আর পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রথমেই ধরে নেয়া হয় তারা পারে। আর সেজন্যই আমাদের সবকিছুতে এক্সট্রা ইফোর্ট দিতে হয়। এটাও কিন্তু মানুষের মধ্যে এক ধরনের মানসিক প্রেশার তৈরি করে। " নারীদের প্রতি পরামর্শ দিয়ে সাবেক এই তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, "যারা মানসিক অসুস্থতা বা বিপর্যস্ততার কারণে নিজেদের ভালনারেবল মনে করেন তাদের প্রতি আমার পরামর্শ হচ্ছে, অবশ্যই একজন সাইকোলজিস্ট দেখাবেন এবং পরিবারের কাছে সহযোগিতা চাইবেন। পরিশেষে এজ অ্যা টিম স্রোতের বিপরীতে সাতরিয়ে আপনার গন্তব্যে পৌঁছে যাবেন।" প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. শামসুল আলম দেশের বিশেষ করে নারীদের কল্যানে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনা এবং উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, "তোমার নিজের উন্নয়ন নিজেকেই করতে হবে। পরিস্থিতি যাই হোক সেটার সাথে মানিয়ে নিতে হবে। তোমাকে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হবে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাও তোমার থাকতে হবে। একবার লস্ট মানে কিন্ত লস্ট ফরেবার। সার কথা হলো, প্রতিযোগিতা থাকতে হবে। কিন্তু সেই প্রতিযোগিতায় নিজেকে টিকিয়ে রাখতে হবে।" তিনি বলেন, "ইউরোপ-আমেরিকার মানুষরা চাইলেও মিথ্যা কথা বলতে পারে না। আর আমরা প্রতিনিয়ত অহরহ মিথ্যা কথা বলে যাচ্ছি। আমরা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বা সামাজিক ক্ষেত্রে যতটা এগিয়েছি আমাদের বিহেভিয়ার্ল প্যাটার্ন ততটা আগায়নি। আমাদের মূল্যবোধ বা দৃষ্টিভঙ্গি ততটা উন্নত হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় পড়েও আমরা উন্নত মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ তৈরি করতে পারছি না।" সরকারের এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, "আমাদের সমাজের কাঠামোটা এখনো কয়েক দশক আগের। আমাদের উন্নয়নের সাথে আমাদের সোশ্যাল নর্মসগুলো উন্নত হচ্ছে না। উন্নত দেশের মানুষ হতে হলে তো উন্নত মন-মানসিকতার অধিকারী হতে হবে। তখনই উন্নত সমাজের ফল পাওয়া যাবে।" প্যানেল ডিসকাশনে পর্বে সঞ্চালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. নাইমা নিগার এবং প্যানেল স্পিকার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব উম্মে ইশরাত, কোকাকোলার মার্কেটিং প্রধান রাজবীন আবির এবং উইমেন ইন ডিজিটাল এর ফাউন্ডার ও সিইও আছিয়া নীলা। অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করেন অ্যাকশনিস্ট ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক আ.ন.ম. ফখরুল আমিন ফরহাদ। উক্ত অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির হেড অফ কমিউনিকেশন রাইসা নাসের। সংগঠনটির হেড অফ এডমিনিস্ট্রেশন খাদিজ আকতার উর্মী এবং শেহেরজান হকের সঞ্চালনায় সিম্পোজিয়ামে অন্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ইমরান হোসেন ভূইয়া। সিম্পোজিয়ামে ফুড পার্টনার হিসেবে ছিলো কুপার্স।

মন্তব্য( মন্তব্য)

profile
crime

আরও পড়ুন

crime

আরও পড়ুন

© স্বত্ব © ২০২৪ জেনারেশন বিডি

Development by : M4YOURS IT