logo

দারিদ্র্য বিমোচন ও রাষ্ট্রের উন্নয়নের জন্য নাগরিকদের সক্ষমতা বাড়ানোর বিকল্প নেই

প্রকাশ: ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ এ ১২:২১ PM

দারিদ্র্য বিমোচন ও রাষ্ট্রের উন্নয়নের জন্য নাগরিকদের সক্ষমতা বাড়ানোর বিকল্প নেই

অর্থনীতিবিদগণের মতে, পৃথিবীতে যত সমস্যা আছে তার মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা দারিদ্র্য। দারিদ্র্যকে তারা সমস্ত সমস্যার মূল হিসেবে অভিহিত করেছেন। এই দারিদ্র্য বিমোচন করা গেলে মানুষের অন্যান্য সমস্যা সমাধান করা সহজ হয়ে যায়। তবে দারিদ্র্যই যে মানুষের প্রধান সমস্যা তা চিহ্নিত করতে মানুষের বছরের পর বছর সময় লেগেছে। লেগেছে গবেষণার পর গবেষণা। অনেক বছরের গবেষণার ফলাফল হিসেবে মানুষের এই উপলব্ধি টুকু সমাজে আজ একটি প্রতিষ্ঠিত তত্ত্ব। এই তত্ত্বের উপর ভর করে অনেকে হয়েছেন সমাজ বিজ্ঞানী, অনেকে হয়েছেন অর্থনীতিবিদ আবার অনেকে হয়েছেন রাজনীতিবিদ। অতি সম্প্রতি আরো একটি শ্রেণী তৈরি হয়েছে যার নাম দারিদ্র্য বিমোচন ব্যবসায়ী (ক্ষুদ্র ঋণ ব্যবসায়ী)। এই মহা সমস্যার সমাধান করার জন্য সবাই যার যার মতো কাজ করে যাচ্ছেন। সরকারি উদ্যোগ, বেসরকারি উদ্যোগ, আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার উদ্যোগ ইত্যাদি পরিলক্ষিত হয় যারা এই মহা সমস্যা চিহ্নিত হওয়ার পর থেকে এর সমাধানের লক্ষ্যে ব্যাপক কাজ করে আসছে। কিন্তু এত কাজ করার পরও দারিদ্র্য কমেনি। বরং বেড়েছে। নিকট ভবিষ্যতে কমতে পারে এমন লক্ষণ আপাতত দেখছি না। আমার দৃষ্টিতে দুটো কারণে সমাজ থেকে দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব হচ্ছে না। একটি কারণ নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. অভিজিত ব্যানার্জি যথাযথভাবে উপস্থাপন করেছেন। পৃথিবীতে সবাই সমান সুযোগ এবং সমান সক্ষমতা (ইচ্ছাশক্তি, শারীরিক সক্ষমতা ও মেধা) নিয়ে জন্মায় না। আর দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয়া মানুষগুলোর মধ্যে খুব কম সংখ্যকই দেখা যারা দারিদ্র্যের শৃঙ্খল ভেঙ্গে এগিয়ে যেতে চায় অথবা যেতে পারে। অর্থাৎ তাদের কারো ইচ্ছাশক্তির ঘাটতি থাকে, কারো শারীরিক সক্ষমতার ঘাটতি থাকে, কারো মেধার ঘাটতি থাকে এবং কারো সুযোগের ঘাটতি থাকে। যার ফলে দরিদ্ররা দরিদ্রই রয়ে যায়। বিপরীত পক্ষে বিত্তশালী পরিবারে জন্ম নেওয়া মানুষগুলোর মধ্যে খুব কম সংখ্যককেই দারিদ্র্যের সাথে সংগ্রাম করতে দেখা যায়। দ্বিতীয় কারণটি হলো ধনবানদের শোষণ করার স্বভাবজাত মানসিকতা। এখানকার বিজ্ঞরা দারিদ্র্য বিষয়ক থিওরি দেন নিজের অবস্থান তৈরি করার জন্য এবং তা বিমোচনের ফর্মুলা তৈরি করেন বিক্রয়ের জন্য, রাজনীতিকরা দারিদ্র্য বিমোচনের ফর্মুলা বাস্তবায়নের তোড়জোড় করেন ভোটের জন্য, আর দারিদ্র্য বিমোচন ব্যবসায়ীরা ক্ষুদ্র ঋণ প্রদান করেন দারিদ্র্যের দুষ্টচক্রকে শক্তিশালী করার জন্য। এই ধনবানদের চেষ্টায় যে সিস্টেম ব্রেক করে সমাজের দুই চার জনের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়না তা নয়। তবে যে পরিমাণ মানুষ উপকৃত হয় তার চেয়ে বেশি হয় প্রচার। আমার ধারণা, যে সিস্টেমটা ধনবানরা তৈরি করেছেন তা মুটেও দারিদ্র্য বিমোচনের উদ্দেশ্যে নয়। বরং তা তৈরি করা হয়েছে ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত উৎকর্ষ লাভের জন্য। আর উপর্যুক্ত প্রথম কারণটি যেহেতু দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রধান সমস্যা সেহেতু দ্বিতীয় কারণটি রুখে দেয়ার ক্ষমতা তাদের থাকার কথা নয়। সমাজের মধ্যে দরিদ্র মানুষগুলোর যা অবস্থা বিশে^র মধ্যে দরিদ্র দেশগুলোর অবস্থাও তাই। উপরের দুটো কারণই দরিদ্র দেশগুলোর উন্নয়নের পথে বাধা। এখানকার মানুষগুলোর সক্ষমতা না থাকার কারণে তারা তাদের সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারে না। রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক পর্যায়ে প্রতিটি স্তরে দরিদ্র দেশগুলোর মানুষের সক্ষমতার ঘাটতি লক্ষ্য করা যায়। ফলে তাদের সম্পদ সমূহ কখনো স্বল্প ব্যবহৃত, কখনো অব্যবহৃত, আবার কখনো অপব্যবহৃত হয়। একটি দেশের সম্পদ সর্বোত্তমভাবে ব্যবহৃত হলে যে পরিমান উন্নয়ন সম্ভব, তা স্বল্প ব্যবহৃত, অব্যবহৃত, অথবা অপব্যবহৃত হলে সে পরিমাণ উন্নয়ন কোনভাবেই সম্ভব নয়। যে কারণে তাদের মাথা পিছু আয় বাড়ে না। ফলে দরিদ্র দেশগুলো দরিদ্রই থেকে যায়। তারপর আবার উন্নয়নের প্রলোভন নিয়ে বিদেশীরা আসে। বিনিয়োগ করে; ঋণ দেয়। তারপর শুরু হয় শোষণ। এই শোষণকেই দরিদ্র দেশে আবার উন্নয়ন হিসেবে অভিহিত করা হয়। যেহেতু তাদের সক্ষমতার ঘাটতি থাকে সেহেতু তারা দারিদ্র্যের এই দুই চক্রের মধ্যেই আবর্তিত হয় বারবার। বিপুল পরিমান সম্পদ থাকার পরও বাংলাদেশ কেন উন্নত রাষ্ট্র হতে পারেছেনা তা ভেবে প্রায়ই আশ্চর্য হতাম। বেশ কিছু দিন ধরে উদ্যোক্তা উন্নয়ন ও মানব সম্পদ উন্নয়ন নিয়ে কাজ করার সুবাদে বিষয়টি পরিষ্কার হয়েছে আমার কাছে। যতটুকু বুঝতে পেরেছি তা হল, উল্লেখিত এক নম্বর কারণটিই মূলত এদেশের উন্নয়নের পথে প্রধান অন্তরায়। যে কারণে সরকারী হিসাবে ১৬.৫ কোটি (আমার ধারণা ২১ কোটি) মানুষ থাকার পরও আমরা জাতি হিসেবে পিছিয়ে আছি। সত্যিকারর্থে উন্নতি করতে হলে আমাদের সর্বস্তরের মানুষের সক্ষমতা (ইচ্ছাশক্তি, শারিরীক সক্ষমতা ও মেধা) বাড়ানো দরকার এবং সমান সুযোগ নিশ্চিত করা দরকার যাতে দেশের এই বিপুল পরিমাণ সম্পদ সর্বাধিক দক্ষতার সহিত কাজে লাগিয়ে উন্নতির শিখরে আরোহন করা যায়। কিন্তু ভাবছি এই কথা কে কাকে বুঝাবে! লেখকঃ উদ্যোক্তা অর্থনীতিবিদ এবং চেয়ারম্যান, এন্টারপ্রাইজ ৩৬০ লিমিটেড ও স্কুল অব অন্ট্রুপ্রেনিউরশিপ ডেভেলপমেন্ট।

মন্তব্য( মন্তব্য)

profile
crime

আরও পড়ুন

crime

আরও পড়ুন

© স্বত্ব © ২০২৪ জেনারেশন বিডি

Development by : M4YOURS IT